আন্তির্জাতিক নারীদিবসের উৎস ও প্রয়োজনীয়তা

আন্তর্জাতিক নারীদিবস নিয়ে কিছু কথা

আন্তর্জাতিক নারীদিবসের উৎস খুঁজতে আমাদের বিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে যেতে হবে। ভাবলে আশ্চর্য লাগে যে সেই সময়েও কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের জন্য সঠিক পরিবেশ ছিল না, তাঁদের ভোটাধিকার ছিল না এবং প্রথম বিশ্বের দেশগুলিতেও লিঙ্গবৈষম্য ছিল। এই বিষয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন বিশ্বজুড়ে মহিলারা। অবশেষে এগিয়ে এলেন ক্লারা জেটকিন নাম্নী এক মহিলা। ১৯১০ সালে আন্তর্জাতিক কর্মরত মহিলাদের সম্মেলন চলাকালীন তিনি বক্তব্য রাখলেন যে মহিলাদের ভোটাধিকার ও সমানাধিকারের দাবিতে একটি বাৎসরিক দিন পালিত হোক। এই দিনটির নাম হোক মহিলা দিবস। ক্লারার বক্তব্য শোনবার জন্য দীর্ঘদিন ধরে হাজার হাজার নারী অপেক্ষা করে ছিল। বিপুল সমর্থন সহ তাঁর প্রস্তাব গৃহীত হল এবং বিশ্বের প্রথম আন্তর্জাতিক মহিলা দিবস উদ্‌যাপন করা শুরু হল ১৯১১ সাল থেকে। এই উদ্‌যাপনকে মান্যতা দিয়েছিল অস্ট্রিয়া, ডেনমার্ক, জার্মানি এবং সুইজারল্যান্ডের মতো দেশ। তারপর থেকে নিয়মিত এই দিনটি পালন করা হয়ে আসছে।

আজকেও যুগেও যখন মহিলাদের ওপর ঘৃণ্য অপরাধ ঘটে থাকে, যখন কিছু দেশে ধর্মের নামে মহিলাদের নিচু চোখে দেখা হয়, যখন প্রত্যন্ত গ্রামে কন্যাভ্রূণ হত্যা হয়, তখন নারীদিবস পালন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। কেবল নারী The Boss বললেই দায়িত্বপালন হয় না, নারীদিবসের মূল উদ্দেশ্য হল সমাজের অনগ্রসর শ্রেণীর মধ্যে মেয়েদের সুরক্ষা, শিক্ষা, স্বাধীনতা ও মর্যাদার বিষয়টি ছড়িয়ে দেওয়া।

২০২৪ সালে নারীদিবসের মূল থিমটি হল Invest in women: Accelerate progress. ভাবছেন এখানে ইনভেস্ট কথাটি ব্যবহার হল কেন? ইনভেস্ট বলতে বোঝাচ্ছে যে বিনিয়োগ করতে হবে মহিলাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনৈতিক উন্নতিতে। ভরসা করতে হবে তাঁদের নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতায়। তবেই নারীদিবস পালনের উদ্দেশ্য সফল হবে।

শেষ করার আগে আন্তর্জাতিক মহিলা দিবসের থিম কালার নিয়ে কিছু কথা বলি। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের থিম কালার হল তিনটি: বেগুনি, সবুজ ও সাদা।

বেগুনি রঙ হল নারীর মর্যাদা, সবুজ রঙ হল আশা এবং সাদা হল পবিত্রতা।

ফেসবুক ও বাস্তব জীবনে আমার সব মহিলা বন্ধুদের আন্তর্জাতিক মহিলা দিবসের শুভেচ্ছা জানাই। মহিলারা যে শুধু আমাদের মা-দিদা-বোন-মেয়ে-স্ত্রী-বন্ধু হিসেবে আছেন তাই নয়, মহিলারা আছেন দেবীরূপে। আমাদের বাঙালিদের প্রধান দেবী কিন্তু দুর্গা-কালী-লক্ষ্মী-সরস্বতী। সুতরাং মহিলা দিবস থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে এঁদেরও কিন্তু অবজ্ঞা করা হবে৷ সেটা যেন মাথায় থাকে।

***

লেখার © বিশ্বজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাংলা অডিও গল্প - ভৌতিক, হরর, থ্রিলার ও অন্যান্য

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বাংলা ভাষার অবক্ষয় নিয়ে কিছু কথা