রাইটার্স ব্লক ও বাঙালি শখের লিখিয়ের বইপ্রকাশ

 কোনও এক লেখক না কবি বুঝি বলেছিলেন যে রোজ নিয়ম করে লেখার জন্য টেবিলে বসতে হয়। তবে লেখা আসে। তবে বড় লেখা লিখে লেখক হওয়া যায়। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে, রোজ রোজ লিখবটা কী? রোজ নতুন গল্পের প্লট খুঁজে বের করা বা রোজ নতুন টপিকের ওপর প্রবন্ধ লেখার মতো ট্যালেন্টেড আমি নই। আবার অন্যের ধারণা কপি করতে আমি রাজি নই। কিংবা পড়াশোনা না করে হাস্যকর, ভাসা-ভাসা বা ভুল তথ্যসমৃদ্ধ প্রবন্ধও আমি লিখতে পারব না। তাহলে উপায়? উপায় হল যে রোজ না লেখা। তবে রোজ বই পড়া। রোজ বই পড়লে লেখার আইডিয়া জন্মায় বা জন্মাতে পারে। যখন মাথায় ভালো আইডিয়া আসবে, তখনই একমাত্র লিখতে বসা। 


অনেকে রাইটার্স ব্লকের কথা বলেন। অর্থাৎ খানিকটা লেখার পরে এক শূন্যতা দেখা দেয়। এমন একটা কিছু যাকে অতিক্রম করে আর ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হওয়া যায় না। আমার ক্ষেত্রে রাইটার্স ব্লক কথাটা ঠিক খাটে না। কারণ আমি রাইটার বা লেখকই নই! লেখালেখি হল একপ্রকার সাধনা। আমি সেই সাধনার পুরোদস্তুর সাধক নই। আমি হলাম নিতান্তই শখের লিখিয়ে। প্লট মাথায় আসা ছাড়াও নিজের মন-মেজাজের ওপর আমার লিখতে বসা নির্ভর করে। তা ছাড়াও নির্ভর করে বছরের কোন সময়ে আমি কতটা ব্যস্ত। যেমন ধরুন মার্চ-এপ্রিল হল অফিসের বাৎসরিক কাজের রিভিউ ও পারফর্মেন্স অ্যাপ্রাইজালের মাস। ফলে কোম্পানি কাজের চাপ বেশি দেয়। নতুন প্রোজেক্টও আসে এই সময়। এই নতুন প্রোজেক্টের চাপ চলতে থাকে বছরের মাঝামাঝি পর্যন্ত। দেখতে দেখতে গ্রীষ্ম-বর্ষার মতো দুটো ঋতু পার হয়ে যায়। বাতাসে যখন পুজোর গন্ধ অনুভূত হয়, তখন হঠাৎ খেয়াল হয় যে আরে, এবছর তো পুজোতে তেমন কোনও পত্রিকায় লিখলাম না! কিন্তু লেখালেখি তো শুরু করা উচিত! পুজো চলে গেলে তার প্রায় পরে পরেই তো জেলা বইমেলাগুলো শুরু হয়ে যাবে। আর জানুয়ারীর প্রথমেই তো কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা! এইটুকু চিন্তা মাথায় আসতেই মাথার মধ্যে রেড অ্যালার্ট জারি হয়ে যায়। দিন-রাত এক করে চলতে থাকে নতুন প্লটের অন্বেষণ। তারপর তড়িঘড়ি লেখা শুরু। যে লেখা লিখতে এমনিতে আমার মতো ল্যাদ খাওয়া লেখকের ১ বছর লাগার কথা, সেটার পাণ্ডুলিপি মাত্র দু'মাসেই তৈরী হয়ে যায়। তারপর শুরু হয় প্রকাশকের সঙ্গে দরকষাকষি। 


প্রকাশক প্রথমে বলতে শুরু করে, "আগামী বইমেলায় হবে না বিশ্বজিৎ-দা। আমাদের প্রকাশিতব্য বইয়ের লিস্ট রেডি। বইমেলার পরে একদম পাণ্ডুলিপি পাঠাবেন।" 

কিন্তু আমিও নাছোড়বান্দা। প্রকাশককে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে অবশেষে রাজি করাই। এরপর শুরু হয় বইয়ের প্রচ্ছদ ডিজাইন নিয়ে আরেক প্রস্থ যুদ্ধ। ডিজাইনার ২০ দিনে ডিজাইন করে দেবে বলে দু'মাস সময় নিয়ে নেয়। এবং শেষে যে ডিজাইনটা সে দেয়, সেটাও নিখুঁত নয়। তখন আবার তাকে বলতে হয়, "তুমি বেশ ভালোই ইলাস্ট্রেশান করেছ। কিন্তু তুমি এই রকম করেছ। আমি ওই রকমটা চেয়েছিলাম। প্লিজ একবার রিভিশানটা করে আমায় তিনদিনের মধ্যে পাঠাও।" 

এদিকে ডিজাইনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলে বর্ণ সংস্থাপন, বইয়ের প্রুফ চেক। লেখক হিসেবে আমাকেই বইয়ের প্রুফ চেকিং করতে হয়। সে যে কী বিরক্তির কাজ, কী বলব! 


এইসব চলাকালীন দুটো কথাই বারবার মনে আসে:

১) বইটা বইমেলার আগে বা বইমেলা চলাকালীন ছেপে বেরোবে তো?

২) যদি তাড়াতাড়ি লেখা শুরু করতাম, তাহলে পাণ্ডুলিপিটা আগেই হয়ে যেত। তাহলে বইটা কলকাতা বইমেলায় মিলবে কিনা, সেই টেনশান থাকত না। 


যাইহোক, শেষ পর্যন্ত একটা ম্যাজিক ঘটে এবং প্রকাশক হল সেই ম্যাজিকের ম্যাজিশিয়ান। বইমেলা শুরুর আগের একদম শেষ মুহূর্তে বই প্রেসে যায় এবং অবিশ্বাস্য দ্রুততায় বই ছেপে বেরিয়ে আসে। হাতে গরম প্রচুর বইতে ভরে ওঠে কলকাতা বইমেলা।


বই নিয়ে লিখছিই যখন, তখন আরও একটা কথা লিখে শেষ করি। আমার সাম্প্রতিক বই নিয়ে সামান্য কথা বলা যাক। এই বছর, কলকাতা বইমেলা ২০২৪-এ আমার দুটো বই প্রকাশিত হয়েছে। 

১) প্যারানর্মাল রহস্যের বই 'আদিদা'। প্রকাশক - মাথামোটার দপ্তর।

২) কল্পবিজ্ঞান ও বিকল্প ইতিহাসভিত্তিক থ্রিলার 'বঙ্গযুদ্ধ'। প্রকাশক - লালমাটি। 


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আন্তির্জাতিক নারীদিবসের উৎস ও প্রয়োজনীয়তা

বাংলা অডিও গল্প - ভৌতিক, হরর, থ্রিলার ও অন্যান্য

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বাংলা ভাষার অবক্ষয় নিয়ে কিছু কথা