মুক্তগদ্য - শীতের রাত ও বৃষ্টি

 শীতের সময় বৃষ্টি একটা মন খারাপের কবিতা। শব্দেরা জড়সড় হয়ে থাকে। ঘুম ভাঙতে চায় না। 

সবসময় শূন্যতা। কোথায় যেন কিছু একটা নেই। কী নেই তা বোঝবার আগে না থাকার ব্যথা ধাক্কা মারে বুকের ভেতর। অনেকগুলো শব্দ একে অপরকে জড়িয়ে ধরে, শীতের মতো কামড়ে ধরে। ঝরা পাতার মতো নিঃশব্দে ঝরে যায় বোবা আর্তনাদ। 


অন্ধকারের দীর্ঘশ্বাসের মতো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ে। অল্প সময়ের এই বৃষ্টি। কিন্তু লুটেরা, শীতল হাওয়া অদৃশ্য ঘোড়ায় চেপে দাপিয়ে বেড়ায় সারা শহর। নিঝুম রাতে হাওয়া যেন ক্ষুধার্ত হয়ে যায়। কেমন যেন ক্ষুধার্ত হয়ে ঘুরে ঘুরে বেড়ায় কাউকে আঁকড়ে ধরার জন্য, এতটুকু ভালোবাসার জন্য। এমন শীত ও ঠান্ডা হওয়ার প্রকল্পে রাতারাতি বেড়ে যায় উষ্ণতার বাজার দর। সামান্য উষ্ণতার জন্য হাতের আঙুলগুলো খুঁজে বেড়ায় উষ্ণতার উৎসস্থল। কিন্তু আমরা সবাই উষ্ণতার স্পর্শ কি পাই? একটু গরম শরীরের বা চামড়ার স্পর্শ পাওয়ার জন্য মনটা কেমন যেন ভিখিরি হয়ে যায়। 


শীতের বৃষ্টির পরে কাদামাখা রাস্তা বোবার মতো চুপ করে থাকে। রাস্তার ধারের রঙচটা দেওয়ালগুলো মৃতের মত চুপ করে থাকে। নির্জীব সিঁড়িগুলো লাশের মতো ঠান্ডা। শরীরকে আরাম দেওয়ার নামে কম্বলগুলো ক্রুর ও শীতলতর হতে থাকে। 


শীতের মত বড় বিষ বুঝি বা আর হয় না। শীতের যেন কোনও তাড়া নেই; আস্তে আস্তে সে যেন মৃত্যুকে ডেকে নেয়, কাছে, আরও কাছে। শব্দেরা অসাড় হয়ে আসে। কবিতা হঠাৎ ছন্দ হারায়। 


রাতের তাপমাত্রা আরও কমে। কুয়াশা যেন অজগরের মতো ধীরে ধীরে জড়িয়ে ধরে গোটা শহরটাকে। আমরা রোজ রাত্রে মারা যাই, আবার পরের দিন ভোরে কোন জাদুকাঠির মাধ্যমে আমাদের চোখ খুলে যায়। যে বাতাস কঠিন আঘাতে ঘুম পাড়িয়ে দেয়, যে বাতাস সাময়িকভাবে পাঠিয়ে দেয় মৃত্যুর দেশে, সেই বাতাসই যেন আবার সূচের মতো আঘাত করে বলে, “ওঠো, সকাল হলো। একটু বাদেই সোনা রোদ এসে পড়বে।” 


আমরা মরতে মরতে বেঁচে উঠি কিংবা বাঁচতে বাঁচতে মরি। একটু কমলালেবুর রোদ স্কিন কেয়ার ক্রিমের মতো আমরা অঙ্গে লাগিয়ে নিই। আমরা শীতকালকে চুমু খেয়ে বলি, “মৃত্যু, তোমায় ভয় করি না। মৃত্যু তোমায় আলিঙ্গন করি, করুনা করি, হয়ত বা ভুল করে ভালোবাসি।"

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আন্তির্জাতিক নারীদিবসের উৎস ও প্রয়োজনীয়তা

বাংলা অডিও গল্প - ভৌতিক, হরর, থ্রিলার ও অন্যান্য

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বাংলা ভাষার অবক্ষয় নিয়ে কিছু কথা