মা দুর্গা - জগতের নেত্রী

অতিরিক্ত অহঙ্কার ভালো নয়। অতিরিক্ত ক্ষমতাও নয়। মহিষাসুর ভেবেছিলেন যে তিনি হলেন অমর, অক্ষয়, অজেয়। কেউ তাঁকে হারাতে পারবে না। ক্ষমতাশালীরা সবসময় তাই ভাবে। শুধু মহিষাসুরই নন, তাঁর যাঁরা ঘনিষ্ঠ অনুগামী, তাঁরাও কি একই আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন না?



(ওপরের ছবিটি আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সাহায্যে তৈরী করা হয়েছে)


মহাসুর চিক্ষুর, উদগ্র, অসিলোম, পরিবারিত, বিড়ালাক্ষ যখন তাঁদের মায়াবী অস্ত্রশস্ত্র ও অভাবনীয় অসুর সেনাবাহিনী নিয়ে দেবীর সঙ্গে লড়তে এলেন, তখন ঠিক কী চিন্তা কাজ করেছিল তাঁদের মনে? তাঁরা ভেবেছিলেন যে কে আগে এই দৈব নারীকে পরাজিত করে ও বন্দি বানিয়ে মহিষাসুরের কাছে নিয়ে যাবে। বোধহয় নিজেদের সুবিশাল সেনাবাহিনীর প্রতি আস্থা এবং দুর্বল দেবতাদের শক্তি নিয়ে তাঁরা এমনই তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করতে শুরু করেছিলেন, তাঁরা ভেবেও দেখেননি যে শত্রু তাঁদের শক্তি ও দর্পকে চূর্ণ করতে কতটা বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে তৈরী হয়ে এসেছে।

দেবাসুরদের এই লড়াইটা আর মাসল পাওয়ারের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। সেটা হয়ে দাঁড়াল মাসল পাওয়ারের বিরুদ্ধে ব্রেন ও মাসলের যৌথ সংগ্রাম। দেবতারা দেখলেন এক সর্বোত্তম অস্ত্র দিয়েই অসুরদের সব অস্ত্র ভোঁতা করে দেওয়া সম্ভব। শক্তিরূপিনী স্বয়ং দেবীই হলেন সেই অস্ত্র। এবং যুদ্ধ লড়তে গেলে শুধুই দল বেঁধে আক্রমণ করলেই চলবে না। চাই একজনের শক্তিশালী নেতৃত্ব। দেবী চণ্ডিকা কেবল অসুর-বিনাশিনী নন, তিনি হলেন পুরুষ প্রধান দেবকূলের মহিলা দলনেত্রী। তিনিই নেত্রী, কারণ তিনি যোগ্যতমা।

তাই দেবী যখন জগৎকে অসুরমুক্ত করলেন, সবাই একবাক্যে তাঁর আধিপত্য মেনে নিল। সেই মানসিকতা আজও আমাদের নরগণের মধ্যে মাতৃমূর্তি কল্পনায় দেবী পুজোর মধ্যে দিয়ে প্রতিফলিত হচ্ছে।

মার্কণ্ডেয় পুরাণের অন্তর্গত শ্রী শ্রী চণ্ডী অনুসারে -

'নিজ শক্তি বলে যিনি ব্যাপ্ত এজগতে

মূর্তি যাঁর সর্ব্ব-দেব-শক্তি-সমষ্টিতে

দেবতা মহর্ষি সব, করে যাঁর পূজা স্তব

নমি ভক্তি ভরে সেই দেবী অম্বিকায়

করুন্ মঙ্গল তিনি মোদের সবায়।'

দেবী জগতের নেতৃত্ব দিন, সবার মঙ্গল করুন। দেবীপক্ষের শুরুতে এইটুকুই বলার। 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

আন্তির্জাতিক নারীদিবসের উৎস ও প্রয়োজনীয়তা

বাংলা অডিও গল্প - ভৌতিক, হরর, থ্রিলার ও অন্যান্য

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বাংলা ভাষার অবক্ষয় নিয়ে কিছু কথা