কলকাতা বইমেলা ২০২৬ - আমার নতুন বই আসছে না


সামনের বইমেলায় আমার কোনও বই প্রকাশিত হচ্ছে না। গত বছরও হয়নি। আমার এই যে বই প্রকাশিত হচ্ছে না, তাতে পাঠক সমাজের ভারী বয়েই গেছে। বাংলা সাহিত্যের এতটুকুও ক্ষতি তাতে হচ্ছে না। তবে আমার ক্ষতি হচ্ছে। মানসিকভাবে অস্থির লাগছে এবং যে লেখক হওয়ার লক্ষ্য সামনে রেখে প্রায় এক দশক আগে লেখালেখি শুরু করেছিলাম, সেই যাত্রাপথ ক্ষতিগ্রস্ত হল। হয়তো এই পোস্ট কেউই পড়বে না। তবু কারণগুলো পাবলিকলি লিখে রাখি।

১) শ্রীভূমিতে বসবাস: শ্রীভূমিতে আমার ফ্ল্যাট দোতলায়, রাস্তার ধারে। শুধু এইটুকু বললে কিছুই বলা হয় না। বরং যেটা বলতে বলতে বাড়ির ঠিক নীচে এক তলায় ঘুপচি ঘুপচি দোকান (যার মধ্যে একটি অসভ্য মোবাইল রিপেয়ারিং-এর দোকান আছে), যেখানে কিছু দোকানদার সকালে-রাতে গালিগালাজ করে। বাড়ির ঠিক উল্টোদিকে বিহারী পানের দোকান, যেখানে এই শীতের রাতেও রাত একটা পর্যন্ত খদ্দেররা চিৎকার করে এবং অন্যের মা-বাবা তুলে গালাগালি করে। এছাড়া আমার ফ্ল্যাটের ঠিক নীচে দাঁড়িয়ে রিকশাওলা বা টোটোওলার চিৎকার-গালাগালি এসব শুনতে হয়। আমাকে এইসব জ্বালাতন করা লোকের অসভ্যতার সামনে সকাল থেকে রাত অবধি মাথা ঠান্ডা রাখতে হয়। শ্রীভূমিতে যেহেতু রাত-বিরেতে শব্দ করার ওপর নিষেধাজ্ঞা নেই, যেহেতু বিহারী-মারোয়াড়ী লোফার ছেলেদের অবাধে চিৎকার করার ওপরে বারণ নেই, শ্রীভূমিতে যেহেতু রাত এগারোটা থেকে একটার মধ্যে পুলিশের গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় না, তাই চ্যাংড়া ছেলেরা যা খুশি তাই করে বেরায়। এবং না বিহারী ছোটলোকদের ঠেকাতে শ্রীভূমির দক্ষিণদাড়ি রোডে কোনও বাংলা পক্ষ নেই।

সকাল থেকে রাত অব্দি কটূ কথা শুনতে শুনতে আমি মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছি। এবং এখানকার সরকারে থাকা তৃণমূল কংগ্রেসের ছেলেরা আমার বাড়ির নীচের দোকানদার ও বিহারী পানওলাদের আড্ডা ভাঙা নিয়ে মাথা ঘামায় না।

ক্রমাগত প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পড়ে আমার জীবনীশক্তি কমে আসছে। মন একটু নিস্তব্ধতা পাওয়ার জন্য, একটা গালাগালি-না-শোনা দিনের ধন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে, কিন্তু ঈশ্বর আমার প্রার্থনা শুনতে পান না। এই পরিস্থিতিতে আর লিখতেও ইচ্ছে করে না, মাথায় নতুন প্লটও আসে না।

২) বাংলা সাহিত্যের লবিবাজি: বাংলায় যে বানিজ্যিক পত্র-পত্রিকাগুলি আছে, সেখানে কিছু নির্দিষ্ট লেখক-লেখিকা আছে। এঁদের লেখাই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ছাপা হয়। আবার এঁরা যখন কোনও বই সম্পাদনা করেন, তখন এমন লেখকদের বই ছাপেন, যারা দল বেঁধে গ্রুপবাজি করে, যারা নোংরা পথে লবি তৈরী করে। এমন করেই অনেক শিশু-কিশোর পত্রিকায় নতুন লেখকশ্রেণী তৈরী হচ্ছে। এদের এই ছাপা নামগুলো আমায় মানসিক হতাশার মুখে ঠেলে দেয়। এইসব দেখে দেখে লেখার ইচ্ছেটা মরে যায়।

৩) মা এবং আমার নিজের অসুস্থতা: আমার মা অসুস্থ। আমি নিজেও দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। শারীরিক অসুস্থতা মানসিকভাবে আমার ওপর প্রভাব ফেলে। এর ফলে ঠিকমতো লেখায় মন বসাতে পারি না।

৪) চাকরি জীবন: চাকরি মোটামুটি একরকম চলছিল। কিন্তু এ আই এসে আমার ঘুম উড়িয়ে দিয়েছে। আমি ডিজিটাল মার্কেটিং-এর যে ক্ষেত্রে কাজ করি, তাতে থাবা বসিয়েছে গুগুলের এ আই সম্পর্কিত স্ট্র‍্যাটেজি। তার মধ্যে অফিসে আমার বসের পলিটিক্সের ফলে আমি নতুন কিছু শিখতে পারছি না। আমার মতে আমার বর্তমান বস আমায় ভাতে মারার তাল করেছে। এই টেনশানের ফলে আমার লেখালেখি নিয়ে ভাবনাই আসে না, একটা গোটা বই লিখে শেষ করা তো অনেক পরের কথা!

সুতরাং আমার লেখালেখির একপ্রকার অপমৃত্যু ঘটল। নতুন বইও কবে বেরোবে বা আদৌ বেরবে কিনা জানি না। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমি চাইনি, কিছুতেই এমনটা চাইনি!

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

বাংলা অডিও গল্প - ভৌতিক, হরর, থ্রিলার ও অন্যান্য

রাইটার্স ব্লক ও বাঙালি শখের লিখিয়ের বইপ্রকাশ

মন্দ লেখক সায়ক গোস্বামী