পোস্টগুলি

ভূতুড়ে মেস - আদিদার সাথে প্রথম সাক্ষাতের গল্প

ছবি
 আদিদা সিরিজের প্রথম গল্প (১) - তুলসীরাম পিজিতে আগমন আমার কলকাতার বন্ধুদের মধ্যে এই ঘটনাটা যাদেরই বলেছি, কেউ বিশ্বাস করেনি। কিন্তু আমি জানি, এই ঘটনা সর্বৈব সত্যি। ঘটনার শুরু আজ থেকে পাঁচ বছর আগে যখন আমি প্রথমবার ব্যাঙ্গালোরে চাকরি খুঁজতে যাই। নতুন শহর। অজানা সংস্কৃতি। ফলে আমি বেশি রিস্ক নিইনি। যশোবন্তপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রথমে এক ব্যক্তি কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম যে কাছাকাছি উত্তর ব্যাঙ্গালোরে ভালো পিজি কোথায় আছে। তিনি আমার চাকরীর জায়গা প্রথমে জিজ্ঞাসা করলেন। আমার উত্তর শুনে বললেন যে উত্তর ব্যাঙ্গালোরের থেকে দক্ষিণ ব্যাঙ্গালোরে থাকলে আমার চাকরিস্থল কাছাকাছি হবে। এবং বললেন এইচ এস আর লেআউটের একটি ভালো পিজি আছে যেখানে সব কর্মরত ছেলেরা থাকে। আমি সেখানে গিয়ে খোঁজ করতে পারি। ঘর যে কোনও সময় পাওয়া যায়। যদিও কোনও এক অজ্ঞাত কারণে ছেলেরা এই পিজি ছেড়ে চলে যায়।  আমি বললাম, "আপনি যখন পিজি সম্বন্ধে এত কিছু জানেন তখন মনে হয় আপনার বোধহয় কোনো ব্যক্তিগত পরিচিতি আছে পিজির মালিকের সাথে।" ভদ্রলোক হাসলেন। তিনি বললেন, "না, পিজির মালিকের সাথে আমার কোনও পরিচয় নেই। কিন্তু হ্যাঁ, আমার এক প

কলকাতা বইমেলা ২০২২

ছবি
বাঙালির চোদ্দতম পার্বণঃ বই-পার্বণ কলকাতা বইমেলা ২০২২ একটা গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। গেটটার মাথার ওপর দিয়ে গলিত সোনার মতো সূর্যালোক মুখে এসে পড়ছে। রোদের তেজ বলছে বসন্ত ক্ষণিকের। গ্রীষ্মকাল সমাগত প্রায়। কিন্তু গরমের কষ্ট কিছুই অনুভূত হচ্ছে না। বইমেলার গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছি কিনা! দু'বছর পরে কলকাতা বইমেলায় প্রবেশের আনন্দে দুপুরের রোদের তীব্রতাকে অবজ্ঞা করা যায়। আলোকচিত্রীঃ বিশ্বজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ২০২২ এর বইমেলায় ৩ নম্বর গেট দিয়ে ঢুকলাম। ঢুকে ডানদিকে যেতেই পালক পাবলিশার্সের স্টল। সেখানে নতুন বইগুলো দেখে নিয়ে চলে গেলাম অন্যান্য প্রকাশনীর স্টলগুলো দেখতে দেখতে। দেখা হল অরণ্যমন প্রকাশনীর চিরঞ্জীৎ দাস এবং শব্দ প্রকাশনীর বিকাশ কল্পের সাথে। কিনলাম সৈকত মুখোপাধ্যায়ের শিম লতার নূপুর। সৈকতবাবু যেন শব্দে নূপুর বাজিয়ে চলে গেছেন। এমনই কাব্যিক গদ্য তাঁর। এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতে দেখা হয়ে গেল সৈকতবাবুর সাথেও। সেখান থেকে এদিক-ওদিক দিশাহীনভাবে হেঁটে বেড়াতে বেড়াতে দেখা হয়ে গেল রূপম প্রকাশনীর অতনু সোমের সাথে।  চারদিকে নজরে এল মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত কোলাহল। সুন্দরী মহিলা ও স্মার্ট যুবকেরা হাত ধরাধরি করে বই কিনতে

মুক্তগদ্য - শীতের রাত ও বৃষ্টি

  শীতের সময় বৃষ্টি একটা মন খারাপের কবিতা। শব্দেরা জড়সড় হয়ে থাকে। ঘুম ভাঙতে চায় না।  সবসময় শূন্যতা। কোথায় যেন কিছু একটা নেই। কী নেই তা বোঝবার আগে না থাকার ব্যথা ধাক্কা মারে বুকের ভেতর। অনেকগুলো শব্দ একে অপরকে জড়িয়ে ধরে, শীতের মতো কামড়ে ধরে। ঝরা পাতার মতো নিঃশব্দে ঝরে যায় বোবা আর্তনাদ।  অন্ধকারের দীর্ঘশ্বাসের মতো ঝিরিঝিরি বৃষ্টি পড়ে। অল্প সময়ের এই বৃষ্টি। কিন্তু লুটেরা, শীতল হাওয়া অদৃশ্য ঘোড়ায় চেপে দাপিয়ে বেড়ায় সারা শহর। নিঝুম রাতে হাওয়া যেন ক্ষুধার্ত হয়ে যায়। কেমন যেন ক্ষুধার্ত হয়ে ঘুরে ঘুরে বেড়ায় কাউকে আঁকড়ে ধরার জন্য, এতটুকু ভালোবাসার জন্য। এমন শীত ও ঠান্ডা হওয়ার প্রকল্পে রাতারাতি বেড়ে যায় উষ্ণতার বাজার দর। সামান্য উষ্ণতার জন্য হাতের আঙুলগুলো খুঁজে বেড়ায় উষ্ণতার উৎসস্থল। কিন্তু আমরা সবাই উষ্ণতার স্পর্শ কি পাই? একটু গরম শরীরের বা চামড়ার স্পর্শ পাওয়ার জন্য মনটা কেমন যেন ভিখিরি হয়ে যায়।  শীতের বৃষ্টির পরে কাদামাখা রাস্তা বোবার মতো চুপ করে থাকে। রাস্তার ধারের রঙচটা দেওয়ালগুলো মৃতের মত চুপ করে থাকে। নির্জীব সিঁড়িগুলো লাশের মতো ঠান্ডা। শরীরকে আরাম দেওয়ার নামে কম্বলগ

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বাংলা ভাষার অবক্ষয় নিয়ে কিছু কথা

এই কথাটা খুব ভুল যে ছেলেরা (মেয়েদের চেয়ে) মাকে বেশি ভালোবাসে। কারণ মেয়েরাও মাকে খুবই ভালোবাসে। মায়ের স্পর্শ জড়িয়ে থাকে জীবনের প্রতিক্ষণে। মা সন্তানের লিঙ্গ দেখে ভালোবাসেন না। তিনি নিজের স্নেহ-মমতার সোনালি আলো ছড়িয়ে দেন নিজের সন্তানদের মধ্যে। সন্তানরা যদি মায়ের সেই স্বর্ণাভ আলোয় আলোকিত হতে চায়, তবে তাদেরও মায়ের ছত্রছায়ায় থাকতে হবে। মায়ের জীবনের সঙ্গে নিজের জীবনকে ওতপ্রোত ভাবে জুড়তে হবে। তবেই মায়ের গভীর জীবনবোধ সন্তানের মধ্যে সঞ্চারিত হবে।  কথাগুলো নিজের জন্মদাত্রী মায়ের ক্ষেত্রে যেমন সত্যি, মাতৃভাষার ক্ষেত্রেও তেমন সত্যি। মাতৃভাষা আমাদের অক্সিজেন। সবসময় জড়িয়ে থাকে, কিন্তু নিজের অস্তিত্বের প্রমাণ না দিয়ে। এক অদৃশ্য উপস্থিতি। মাতৃভাষার ভালোবাসা গভীর, কিন্তু সবাই তা উপলদ্ধি করে না। আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষার সাথে মায়ের তুলনা চলেই আসছে। মা বুড়ি হয়ে গেলে আর সন্তানেরা বড় হয়ে গেলে, বহু স্বার্থপর সন্তান মায়ের থেকে নিজের দূরত্ব বজায় রাখতে চায়। সরল ও মাটিঘেঁষা মাকে ভুলে থাকতে পারলেই যেন তাদের আনন্দ। বাংলা ভাষার সাথেও আমাদের সম্পর্কটা যেন কিছুটা তেমনই হয়ে গেছে। অফিস, ইস্কুল, বড়লোকি আড্ডা,

কলকাতা বইমেলায় ভূতের বই

ছবি
বইয়ের নামঃ পড়লে ভয় পাবেন প্রকাশকঃ আগন্তুক মুদ্রিত মূল্যঃ ২২০ টাকা  ************** ভূতের গল্প তো অনেক পড়লেন। কিন্তু এমন ক'টা ভূতের গল্প পড়েছেন যা পড়বার পরে মনের ভেতর ভয়ের অনুভূতি সুনামির মতো আছড়ে পড়ে? এমনই এক ভূতের গল্পের বই 'পড়লে ভয় পাবেন'। গল্পগুলো পড়তে পড়তে মনে হবে, কেউ যেন আড়াল থেকে লক্ষ করে চলেছে আপনাকে। তার শীতল নিঃশ্বাস পড়ছে আপনার ঘাড়ের ওপর। হয়তো ঘরের আলো নিভে গেলেই সেই প্রেতলোকের অশরীরী ঝাঁপিয়ে পড়বে আপনার ওপর আর তারপর... 'পড়লে ভয় পাবেন' বইতে আছে আটটি ছোট-বড় গল্প। আটটি গল্পের সারসংক্ষেপ নিচে দেওয়া হলঃ ১) লিথপসঃ গাছ আড়ালে এক ভীতিকর প্রাণীর গল্প। সাথে আছে অশরীরীর আনাগোনা। ২) অপদেবতাঃ এক নির্জন দ্বীপে মাছ ধরতে যায় এক ভিডিও ব্লগার এবং এক জেলে। তারপর কী হয় তাদের দুজনের? ৩) ফাটলঃ শুখানি গ্রাম হল উত্তরাখণ্ডের এক পরিত্যক্ত গ্রাম। সেই গ্রামের পটভূমিকায় এক ভয়ংকর গল্প। ৪) মাঃ এটি ঐতিহাসিক গল্পের মোড়কে ভৌতিক ও অলৌকিক গল্প। গল্পে রয়েছে বাংলায় বর্গী আক্রমণ, অশরীরী উপস্থিতি এবং সর্বোপরি এক দেবীর কথা। ৫) অপার্থিব দেবতাঃ কসমিক হরর নিয়ে গল্প পড়তে যাঁরা পছন্দ করেন, এই গল্পটি সেই

ভ্যালেনটাইন্স ডে - বিশ্বজিতের কথা

 এই যে লিখতে বসেছি, এখন ভ্যালেন্টাইন্স ডের রাত। প্রেমিক-প্রেমিকরা গত বেশ কয়েকদিন ধরে রোজ ডে, প্রপোজ ডে, প্রমিস ডে, হাগ ডে, কিস ডে এবং সর্বোপরি ভ্যালেন্টাইন্স ডে নিয়ে মাতামাতি করে হয়তো ভাবছে এবার কী করা যায়। আগামীকাল মানে ফেব্রুয়ারীর পনেরো তারিখ কী করবে।  আমি অবশ্য ভাবছি না। আমার কোনও প্রেমিকা নেই। আজ থেকে দশ বছর আগেও ছিল না। কুড়ি বছর আগে? উঁহু, না। আমার কখনই প্রেমিকা জোটেনি৷ আসলে শীতে কুঁকড়ে থাকা বুড়ো মানুষের মতোই আমার মনটা। আমার মন মেয়েদের শিকার মনে করে শ্বাপদের মতো ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে না। আমার মন হল এক ইন্ট্রোভার্ট বা অন্তর্মুখী মানুষের মন। এমন এক মন যা মেয়েদের ভালোবাসার কথা বলতে ভয় পায়। তাই মেয়েদের নির্লজ্জের মতো বিরক্ত করতে পারি না - না স্যোশাল মিডিয়ায়, না বাস্তব জীবনে। কিন্তু তাই বলে কি আমার মধ্যে ভালোবাসা নেই? আছে, ঠিকই আছে।  আমি যেহেতু ভালোবাসা বিলোনোর জন্য সঙ্গিনী খুঁজে পাইনি, তাই নিজের ভালোবাসা মানবীর বদলে বস্তুদের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছি। আমি অক্ষরশিল্পী হতে চেষ্টা করেছি, আমি ভালোবেসেছি পাহাড়, আমি অন্ধভাবে মনের ভেতর রেখে দিয়েছি সুন্দর গান ও চলচিত্র। এইসব নিয়েই আমি নিজের জীবনকে বেঁধে